ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

ইতালি ইউরোপের একটি দেশ। এদেশে প্রচুর পরিমাণে প্রবাসীরা কাজের সন্ধানে যাই। ইতালি সরকার প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে অনেক কর্মী নিয়ে থাকে। তাছাড়া তাদের দেশে টুরিস্ট ভিসা হিসাবেও বেড়াতে যাই। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে ইতালি কাজের জন্য যায়।

ইতালি ভিসা আবেদন

এ কারণে ইতালি সরকার বাংলাদেশে দূতাবাস চালু করেছে। শ্রমিকেরা খুব সহজে ভিসা আবেদন করে কাজের জন্য যেতে পারে। আমরা জানবো ইতালি যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদন কিভাবে করতে হয়। বিভিন্ন প্রসেসিং গুলো বিস্তারিত আলোচনা করব।

পেজ সূচিপত্রঃ ইতালি যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদন

ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানবো। ইতালি ভিসা জন্য সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে  কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য আবেদনের লিংক ও ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। তবে অবশ্যই আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখতে হবে।  কাগজপত্র ছাড়া আপনি আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন না। এখন জেনে নিই কি কি তথ্য গুলো লাগবে।

  • প্রথমে আপনাকে ইতালির যে ভিসা আবেদন লিংকে আছে ওটা ওপেন করতে হবে। পরবর্তীতে লিংকটি  নিচে দিয়ে দেওয়া হবে। আশা করি সেটা দেখে নিবেন। ইতালির দূতাবাসের একটা লিংক। এই লিংক এ প্রবেশ করুন।
  • লিংকে প্রবেশ করার পর আপনাকে ভিসার ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে। কিভাবে আবেদন করতে হয় দেখে দেখে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে।
  • এরপর আপনাকে ইতালি ভিসা আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটা সম্পূর্ণ সঠিকভাবে যাতে করে কোন রকমের ভুল না থাকে তা পূরণ করা হয়ে গেলে সাবমিট করতে হবে। 
  • তারপরে সেখানে যে কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন সেগুলো স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
  • এরপর আপনাকে ইতালির ভিসা ফ্রি পরিশোধ করতে হবে। এ কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর দেখতে হবে কোন ভুল তথ্য না থাকে। কারণ অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ভুল হয়ে গেলে সেটা আপনার জন্যই ক্ষতির কারন। তাই যদি একা না পারেন তাহলে কোন জানা মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কাজটি সম্পূর্ণ করবেন।
  • পরবর্তীতে ভিসা সম্পন্ন কাজটি হয়ে যাওয়ার পর আপনি আবেদন ফরম ইতালি ভিসা অফিসে জমা করে দিবেন। ইতালির ভিসা অফিসে জমা দিবেন তাহলে আপনার আবেদন করার নিয়ম সম্পূর্ন ভাবে শেষ হবে।

তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে ইতালি ভিসা আবেদন করার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আশা করি আপনি উপরে নিয়ম গুলো পালন করে ভিসার সম্পূর্ণ কাজ শেষ করবেন।

ইতালি ভিসা করার আবেদন লিংক

ইতালি ভিসা আবেদন আপনি লিংকে প্রবেশ করে ভিসার আবেদন পারবেন। তবে এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে করার জন্য আপনাকে ভিএসএফ গ্লোবাল ভিসা আবেদন কেন্দ্রে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সকল কাগজপত্র এবং আবেদনের ফি জমা দিতে হবে। এটার জন্য সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকার গুলশান ও বনানীতে ভিএসএফ এর গ্লোবালের সরকারি ভিসা আবেদন কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে গিয়ে আপনি খুব সহজেই আপনার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন।

ইতালি ভিসার আবেদনের লিংকঃhttps://visa.vfsglobal.com/bgd/en/ita/apply-visa

আপনারা যারা ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করবেন তারা অনেকেই ভিসা আবেদনে যে লিংকটি সেটা সঠিক লিঙ্ক খুঁজে পান না। যার কারণে আপনারা অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়ে যান। আপনার অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় কিন্তু আপনি সঠিকভাবে আবেদনটি করার কোন প্রক্রিয়া খুঁজে পান না। দালালের মাধ্যমে আপনারা অনেকেই প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। ইতালি সরকার ভিসার জন্য সরকারি ভাবে ওয়েবসাইট চালু রেখেছে। সেখান থেকে আপনি আপনার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন। তাই আপনাদের পরামর্শ দিব জেনে বুঝে খুঁজে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করুন।

ইতালি ভিসা করার আবেদন ফরম

ইতালি ভিসা আবেদন করার জন্য আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য আপনি অফলাইন অথবা অনলাইন দুই ভাবে ফর্ম সংগ্রহ করতে পারেন। তবে আপনি অনলাইনে ইতালি ভিসা আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করতে চান। তাহলে আপনাকে অনলাইনে মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য আপনাকে গুগোল এ ইতালি ভিসা আবেদন ফর্ম লিখে সার্চ দিতে হবে। তাহলে আপনার পিএফ ফরমেটে ফরমটি চলে আসবে এবং সেটি আপনি ডাউনলোড করে নিবেন। ডাউনলোড করার পর আপনি সকল তথ্যগুলো পূরণ করে ভিসা অফিসে জমা দিবেন।

তাছাড়া অফলাইনে ফরমটি সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে ইতালির নির্ধারিত ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করতে পারেন। ইতালি ভিসা আবেদন ফরমটি যথাযোথ ভাবে পুরন করে ইতালি ভিসা অফিসে জমা দিবেন। তাহলে আপনার কাজ সম্পূর্ণ হবে।

ইতালি ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগে

ইতালি ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগে তা আমরা জানবো। আপনি যে দেশে জান না কেন ভিসা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে। আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করেন তাহলে সে অনুযায়ী কাগজপত্র লাগবে। আবার আপনি যদি কাজের উদ্দেশ্য যেতে চান তাহলে ওয়ার্ক পারমিট কাগজপত্র লাগবে। কিছু ক্ষেত্রে ভুসার ক্যাটাগরি উপর কাগজ লাগে। আর আপনি যদি ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাহলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আপনাকে সকল কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে। নিচে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

  • সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদি পাসপোর্ট এবং সর্বনিম্ন ২ পৃষ্টার খালি পাতা।
  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পাসপোর্ট লাগতে পারে।
  • পাসপোর্ট স্ক্যান কপি।
  • ভিসার আবেদন ফর্ম।
  • প্রয়োজন মোতাবেক ছবি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
  • ভিসা আবেদন ফি এবং ফি প্রদানের রশিদ।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট কপি।
  • স্বাস্থ্য বীমা পত্র।
  • মেডিকেল রিপোর্ট ।
  • দক্ষতার সার্টিফিকেট কপি।
  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে কাজের যোগ্যতা।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কপি।
  • স্টুডেন্ট ভিসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও IELTS  কপি জমা দিতে হবে।
  • আবেদন করার লিংক।
উপরের এই তথ্য গুলো দিয়ে আপনি সহজেই ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আশা করি আপনার অনেক কাজে দিবে।

ইতালি ভিসা প্রসেসিং করার নিয়ম

ইতালি ভিসা আবেদন করার পর ভিসা প্রসেসিং শুরু হয়। ভিসা প্রসেসিং হতে প্রায় ২ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে সময় বেশি লাগতে পারে। এজন্য আপনাকে ধৈর্য ধারন করতে হবে। আপনি ভিসা জমা দেওয়ার পর তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন। সকল কাগজপত্র ও তথ্যগুলো ঠিক আছে কিনা। যদি আপনার সকল তথ্য এবং কাগজপত্র সঠিক থাকে। তাহলে আপনি ভিসার অনুমোদন পেয়ে যাবেন।

আর যদি আবেদন ফরমে ভিসা তথ্যগুলো সঠিক না হয়। যদি কোন কারণে ভুল তথ্য পুরন করেন তাহলে আপনার ভিসা রিজেক্ট করে দিবে। আর রিজেক্ট করে দিলে আপনার মোবাইল নাম্বারে জানিয়ে দেওয়া হবে। কেন রিজেক্ট করা হলো তার কারণ জানিয়ে দেওয়া হবে।
ইতালি ভিসা আবেদন

ইতালি কোন কাজের চাহিদা বেশি

ইতালি কোন কাজের চাহিদা বেশি তা আপনারা এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন। আপনারা যারা কৃষি কাজের জন্য ভিসা নিয়ে যেতে চান। তারা জানতে চান কোন কাজের চাহিদা বেশি। কারণ যে কাজের চাহিদা বেশি হবে সে কাজ আপনি যদি ভালো জেনে থাকেন তাহলে আপনি সেই কাজটা করে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন। ইতালিতে সব ধরনের কাজেরই অনেক চাহিদা রয়েছে। কারণ ইতালিতে কাজের চাইতে শ্রমিক কম। যার কারনে ইতালি সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে।

আপনি যে কাজে পারদর্শী বা দক্ষতা সে কাজের ভিসা নিয়ে আপনি সেখানে যাবেন। তাহলে আপনি সে কাজটি বিনিময়ে বেশি বেতন পাবেন। ইতালিতে জনসংখ্যা কম কিন্তু কাজের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই অবশ্যই কাজের চাহিদা বুঝে আপনি সেই দেশে ভিসা আবেদন করবেন। এখন আমরা জেনে নিব কোন কাজের চাহিদা বেশি।
  • কৃষি কাজ
  • ড্রাইভিং
  • মেকানিক্যাল
  • কনস্ট্রাকশন
  • ইলেকট্রিক্যাল
  • রেস্টুরেন্ট
  • ক্লিনার
  • বিভিন্ন কোম্পানির কাজ
উপরের কাজ গুলোর বেশি চাহিদা রয়েছে। এজন্য আপনি যখনই ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করবেন। অবশ্যই আপনার আবেদন আপনার কাজের দক্ষতার উপর ভিসার আবেদন করবেন। সবকিছু  জেনে বুঝে গেলে আপনি ইতালিতে সহজে কাজ পেয়ে যাবেন। আর এতে আপনার কাজ করতে অনেক ভালো লাগবে। আশা করি বিষয় গুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে।

ইতালি কোন কাজের বেতন বেশি

ইতালি কোন কাজের বেতন বেশি সে সম্পর্কে জানবো। ইতালিতে যারা যাই অনেকেই কৃষি ভিসার উপরে যাই। কারণ ইতালি সরকার কৃষি ভিসার জন্য বেশি পরিমাণে নিয়োগ করে থাকে। তাছাড়া অন্য কাজের চাহিদা বেশি আছে। কিন্তু অন্য কাজের চাইতে কৃষি কাজের চাহিদা অনেক বেশি। ইতালিতে কৃষি খাতের অবদান সবচাইতে বেশি রয়েছে। সেই দৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজ রয়েছে। ফল, শাকসবজ, পশুপালন ইত্যাদি ফসল গুলো উৎপাদন করে থাকে। বাংলাদেশের শ্রমিক সেখানে এই ফসল গুলো আবাদ করে থাকে। ইতালি সরকার এক এক কাজের জন্য এক এক রকমের বেতন দিয়ে থাকে।

আপনি যদি কৃষি কাজের জন্য যান এখানে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে থাকে। কনস্ট্রাকশন কাজে যান প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বেতন পাবেন। তাছাড়া হোটেল কাজ করলে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। এরকম করে আপনি বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন বেতন পেতে পারেন। তাছাড়া আপনি যদি কোন কাজের দক্ষ হোন। তাহলে আপনি সেই দক্ষতা অনুযায়ী বেতন পাবেন। যাদের কাজের দক্ষতা নেই তারা কাজের জন্য তুলনামূলকভাবে কম বেতন পেয়ে থাকে। আপনারা যারা ইতালি ভিসা কাজের জন্য যাবেন অবশ্যয় কাজ শিখে যাবেন। তাহলে  আপনারা বেতন বেশি পাবেন। আপনাদের আশা করি বিষয়গুলো  বুঝতে পেরেছেন।

ইতালিতে বাংলাদেশের টাকার রেট কতো

ইতালি একটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশঈয়।এটির প্রধান মুদ্রা হচ্ছে ইউরো। অন্যের দেশে তুলনায় অনেক শক্তিশালী ও বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রা। আমরা ইতালির ইউরো মান এক ইউরো সমান বাংলাদেশের কত টাকা আমরা সে ব্যাপারে আলোচনা করব। আমি যে সময় লিখছি সে সময় অনুযায়ী ১ ইউরো সমান বাংলাদেশের প্রায় ১৩১ টাকা। এই বিনিময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে পরিবর্তনশীলতার উপর নির্ভর করে প্রতিদিন পরিবর্তন হতে পারে। বাংলাদেশের তুলনায় ইতালির ইউরো একটি শক্তিশালী মুদ্রা। কারণ ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বাণিজ্যিক ক্ষমতা অনেক বেশি শক্তিশালী। 
ইতালি ভিসা আবেদন

শেষ কথা

আশা করি আপনি উপরের তথ্যগুলো দিয়ে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। কারণ নিজে নিজেই ভিসা আবেদন করা যায়। যদি আপনি সঠিক নিয়ম জেনে থাকেন। তাহলে যে কোন দেশের আপনি ভিসা আবেদন করতে পারবেন। আপনি জানা মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিবেন। কোন দালাল চক্করে পড়ে ভূয়া ভিসা নিবেন না। এদের থেকে দূরে থাকায় ভালো। তাই বলবো ইতালি ভিসা আবেদনের জন্য যে সকল কাগজপত্র দরকার সেগুলো আগে সংগ্রহ করে ভিসা আবেদন করবেন।

তাহলে আপনি ইতালি ভিসা অনুমোদন পেয়ে যাবেন। পরিশেষে বলতে চাই আপনি যদি এয় আর্টিকেল পড়ে কোন উপকার পেয়ে থাকেন। তাহলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও ইতালি যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শেষ কথা বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url